তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম | নামাজ শিক্ষা

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম | নামাজ শিক্ষা

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

আসসালামুআলাইকুম প্রিয় পাঠক আশা করি আপনি ভালো আছেন। প্রিয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ভাই/বোন আপনি নিশ্চই তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানতে চাচ্ছেন। 

আজকের পোস্টটি আপনাকে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার নিয়ম জানাতে সহায়তা করবে বলে আশাবাদী। দয়া করে মনোযোগ সহকারে পুরো লেখাটা পড়ার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। 

কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমাদের কমেন্ট এর মাধ্যমে জানতে পারেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।

তাহাজ্জুদ নামাজ কি জেনে নেই

প্রিয় পাঠক তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানার আগে আমরা জেনে নেই তাহাজ্জুদ নামাজ কি। মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন শুধুমাত্র তার ইবাদত বন্দেগী করার জন্য। 

তাহাজ্জুদ নামাজ ও তার মধ্যে অন্যতম একটি ইবাদত। মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের উপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ( ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব ও এশা ) ফরয করে দিয়েছেন। 

অর্থাৎ এই নামাজ আমাদের পড়তেই হবে নতুবা আমরা গুনাহগার হবো। আর এই নামাজ ই আমাদের পরকালের সুখের চাবিকাঠি। আল্লাহ বলেছেন নামাজ হলো জান্নাতের চাবিকাঠি। এখন তাহাজ্জুদ নামাজ তাহলে কি। 

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত গুরুত্ব ফরজ নামাজ গুলোর পরই এর অবস্থান। ফরজ নামাজের পরের স্থানেই তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্বের আর ফজিলত এর স্থান। তাহাজ্জুদ নামাজ ফরজ নামাজ নয়। এটি হলো নফল নামাজ। 

তাহাজ্জুদ নামাজ নফল নামাজের মধ্যে অন্যতম। মহান আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে বিশেষ অনুগ্রহ পাওয়ার অন্যতম উপায় হলো এই নামাজ। আমাদের সকলের উচিৎ এই নামাজের নিয়ম আয়ত্ত করা। 




তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কখন জেনে নেই

আমরা তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে সূচনায় কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য জানতে পারলাম কিন্তু আমরা এখনো জানিনা যে তাহাজ্জুদ নামাজ কখন পড়তে হয় এই নামাজের সময় কখন। 

তাহলে বলি, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে হয় রাতে। আরেকটু পরিষ্কার করে বললে বলা যায়, এই নামাজ এশার নামাজের পর থেকে ফজর নামাজের সময় হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত অব্দি পড়া যায়। 

অর্থাৎ, আপনি যদি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে চান তাহলে আপনাকে এশার নামাজ পড়ার পরে এই নামাজ পড়তে হবে। 

তবে, মধ্যরাতের পর থেকে ফজরের নামাজের সময় শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এই নামাজ পড়ার সর্বোত্তম সময়। 

তবে কেউ যদি মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট বোধ করেন তাহলে সে এশার নামাজ পড়ে বিতর নামাজের সাথে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে নিতে পারেন। 

এতে কোনো অসুবিধা নাই। তবে মধ্যরাতের পর পড়াই উত্তম। আমরা মধ্যরাতের পর পড়ার চেষ্টা করবো। 

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল জেনে নেই

আপনি যদি ভালোমত পড়েন তাহলে লক্ষ্য করে দেখবেন পূর্বেই আমি বলেছি তাহাজ্জুদ নামাজ একটি নফল নামাজ। এটি সুন্নত নামাজ নয়। 

সাধারণত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সকল নামাজ আল্লাহর হুকুম ছাড়াই আদায় করতেন এবং তার উম্মতদের আদায় করার জন্য বলেছেন সেগুলো হলো সুন্নত নামাজ। 

সুন্নত নামাজ মহান আল্লাহ তায়ালার জন্যই পড়া হয়। 

আর অন্যদিকে যে সকল নামাজ করলে ফজিলত রয়েছে সওয়াব পাওয়া যায় কিন্তু না পড়লে কোনো গুনাহ নেই সেই সকল নামাজ হলো নফল নামাজ। 

তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আপনি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারবেন কিন্তু যদি না পড়েন তাহলে কোনো গুনাহ হবে না। তাই তাহাজ্জুদ নামাজ নিঃসন্দেহে নফল নামাজ।

তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত আরবী উচ্চারণ সহ

অন্যান্য নামাজের ন্যায় তাহাজ্জুদ নামাজের ও নিয়ত রয়েছে। এই নামাজ শুরু করার আগে নিয়ত করে নিতে হবে। নিচে তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত আরবী উচ্চারণ সহ দেওয়া হয়েছে।

আরবী নিয়ত : 

**نَوَيْتُ اَنْ - اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ - اَللهُ اَكْبَر **

আরবী উচ্চারণ : 

নাওয়াই-তুয়ান উসা-লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকা-আতাই সালা-তিত তাহাজ্জতিই মোতা-ওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবর।

বাংলা অনুবাদ : 

আমি নিয়ত করলাম- সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহর নামে কাবা শরীফের দিকে ফিরে তাহাজ্জুদের দুই রাকাত নামাজ পড়ার।


এই হলো তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত এবং আরবী উচ্চারণ সহ। এই নিয়ত পাঠ করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা শুরু করতে হয়।


তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত তা জেনে নেই

তাহাজ্জুদ নামাজ কতো রাকাত তা একটি সংখ্যায় বলা যাবে না। কারণ, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেখানো পদ্ধতিতে আমাদের নামাজ আদায় করতে হবে। 

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদ নামাজ একেক সময় একেক রাকাত আদায় করতেন। 

তিনি কখনো দুই রাকাত, কখনো চার রাকাত, কখনো ছয় রাকাত, কখনো আট রাকাত আবার কখনো বারো রাকাত আদায় করতেন। 

তবে এটা বলা যায় যে, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে হয় দুই রাকাত করে। এভাবে দুই রাকাত দুই রাকাত করে আপনি দুই, চার, ছয়, আট বা বারো রাকাত পড়তে পারেন। 

তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা কি জেনে নিন

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে প্রথমে সূরা ফাতেহা দিয়ে শুরু করে তারপর অন্য একটি সূরা পড়তে হয় এক্ষেত্রে সূরা না মেলালেও চলবে। 

এরপর রুকু সিজদা দিয়ে দ্বিতীয় রাকাতে আবার সূরা ফাতেহা পরে অন্য আরেকটি সূরা পড়তে হয়। 

এইভাবে দুই রাকাত নামাজের মাধ্যমে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে হয়। বলতে গেলে তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নামাজের অনুরূপ শুধু নিয়ত ভিন্ন। তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য নির্ধারিত কোনো সূরা নেই।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মাবলি জেনে নেই

এতক্ষণ আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, নিয়ত ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা নিয়েছি এখন আমরা জানবো তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে। 

অবশ্য ইতিমধ্যেই অনেকে বুঝে গেছেন তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে তবুও বলবো ভালোমত সবটুকু পড়ুন কারণ অল্প বিদ্যা ভয়ংকর।

পূর্ণাঙ্গ জানার চেষ্টা করুন। যাইহোক, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম নিচে দেওয়া হলো।

১. নামাজের নিয়ত করা 

নামাজের নিয়ত করে নামাজ শুরু করা। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবীতে বা বাংলায় আপনি যেভাবে সুবিধা বোধ করেন সেভাবে পড়লেই হবে।

২. তাকবীরে তাহরীমা বলে যথানিয়মে হাত বাঁধা

নিয়ত করার পর তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধা। এই নামাজ উচু স্বরে কিংবা নিম্ন স্বরে আদায় করা যায়। 

৩. আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ বলে সূরা ফাতেহা পাঠ করা

আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রজিম, বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলে সূরা ফাতেহা পাঠ করতে হবে। 

৪. সূরা ফাতেহা পড়ার পর অন্য একটি সূরা পড়া

অন্যান্য নামাজে আমরা যেমন সূরা ফাতেহা পড়ার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পরী অনুরূপ ভাবে এই নামাজেও ফাতেহার পড়ে অন্য একটি সূরা পড়া হয়। তবে সূরা না মেলালে সমস্যা নেই।

৫. রুকু করা

এরপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যাওয়া। এবং রুকু করে সামিআল্লাহ হুলিমান হামিদাহ বলে রুকু শেষ করা। 

৬. সিজদাহ করা

রুকু শেষে আল্লাহু আকবার বলে এবার সিজদাহ দিতে হবে। সিজদাহ শেষ করে আবার দ্বিতীয় রাকাত শুরু করতে হবে।

৭.  উপরের ৩ থেকে ৬ নাম্বার নিয়ম অনুযায়ী পুনরায় করা। 

এভাবে দুই রাকাত সম্পন্ন করে দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠকে বসতে হবে এবং সালাম ফিরিয়ে মুনাজাত করে তাহাজ্জুদ নামাজ শেষ করতে হবে। 

আমরা আগেই জেনেছি দুই রাকাত করে তাহাজ্জুদ নামাজ ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হলো, তাকবীরে তাহরীমা বলে সূরা ফাতেহা সাথে আরেকটি সূরা পড়ে অনুরূপভাবে দুইটি রাকাত শেষ করে সালাম ফিরিয়ে আদায় করতে হয়। 

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত কি জেনে নেই

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত অনেক। আমরা এই নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহর অশেষ রহমত পারে পারি। আমাদের মনের নেক ইচ্ছা গুলো পূরণ করার লক্ষে আমরা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর দরবারে হাত তুলে আমাদের মনের নেক ইচ্ছাগুলো জানাত পারি। 

তার রহমত প্রার্থনা করতে পারি। মহান আল্লাহ তায়ালা নিশ্চই অনেক দয়ালু, তিনি আমাদেরকে দয়া করবেন। যে বান্দারা তাদের রাতের আরামের ঘুম রেখে মহান আল্লাহর দরবারে এসে হাজির হলো তারা অন্যসব বান্দাদের থেকে অনেক এগিয়ে গেলো। 

প্রতি রাতেই মহান আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে আসেন তার বান্দাদের চাওয়া পাওয়া শুনতে। তাই এই নামাজের ফজিলত বলে শেষ করা যাবে না। 

আমাদের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের এই আর্টিকেল টি পড়ার জন্য। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে আপনাদের জানাতে পেরেছি তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে। 

এভাবেই ভালো কাজের সাথে থেকে যেতে চাই। আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জেনে প্রতিদিনের নামাজের রুটিনে রাখার। 

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে নিজের জন্য এবং অন্যের জন্য মন ভরে দোয়া করবেন। আজ এই পর্যন্তই। পোস্টটি অন্যদের সাথে শেয়ার করতে লিংক কপি করে আপনার ফেসবুক আইডিতে একটা পোস্ট করে দিন। আর হ্যা, কোনো প্রশ্ন কিংবা মতামত থাকলে কমেন্ট করুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
Facebook Page
telegram
প্রিমিয়াম সাজেশন গ্রুপ [9 to 12]

আপনি যদি নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তাহলে নিচের দেওয়া গ্রুপে জয়েন করুন। এই গ্রুপে সকল প্রিমিয়াম সাজেশন এবং নোট পেয়ে যাবেন। আশা করি আপনার পরীক্ষায় অনেক উপকার হবে।

গ্রুপ : এখানে ক্লিক করুন