বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম | নামাজ শিক্ষা

বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম | নামাজ শিক্ষা

বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

আসসালামুআলাইকুম প্রিয় পাঠক বন্ধুরা। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আপনি এই পোস্টের টাইটেল " বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম | নামাজ শিক্ষা " এইটা দেখে এসেছেন নিশ্চই আপনি বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম জানেন না। 
আর কোনো চিন্তা নেই, আজকের পোস্ট টি পরে আপনি বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম নিয়ে সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন আশা করি। 

আজকের পোস্ট থেকে আমরা জানবো বিতর নামাজ কি বিতর নামাজের ফজিলত কি, বিতর নামাজ কি ওয়াজিব, বিতর নামাজের সঠিক সময় কখন, বেতের নামাজের সূরা আরবীতে ও বাংলায়, বেতের নামাজের দোয়া আরবীতে ও বাংলায়, বেতের নামাজের সূরা আরবীতে ও বাংলায়। 

বেতের নামাজের দোয়া আরবীতে ও বাংলায়, বেতের নামাজ কয় রাকাত পড়তে হয়, বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম গুলো কি, বিতর নামাজের নিয়ত আরবীতে ও বাংলায়, বিতর নামাজে দোয়া কুনুত না পারলে বিতর নামাজ কি হবে এই সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

"বিতর" শব্দের অর্থ হলো "বিজোড়"। তাহলে বিতর নামাজের অর্থ হলো বিজোড় নামাজ। এই নামাজ মূলত এক রাকাআত। কারণ এক রকাআত যুক্ত না করলে কোনো নামাজ ই বিজোড় হয় না। 

এই সম্পর্কে দলীল হিসাবে ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত প্রসিদ্ধ হাদীসটি পেশ করেন যে, 

‘রাত্রির ছালাত দুই দুই (مَثْنَى مَثْنَى) করে। অতঃপর ফজর হয়ে যাবার আশংকা হ’লে এক রাক‘আত পড়। তাতে পিছনের সব ছালাত বিতরে (বেজোড়ে) পরিণত হবে’।[19]

এই হাদিসটি থেকে বুঝতেই পারছেন যে বিজোড় নামাজে এক রকাআত অতিরিক্ত পরে বিতর নামাজ আদায় করতে হয়। 

বিতর নামাজ পড়ার ফযীলত কি তা জেনে নেই

বিতর নামাজের গুরুত্ব এবং ফযীলত অনেক। বিতর নামাজ পড়ার ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীসে বর্ণিত আছে। তার মধ্যে নিচে কয়েকটি হাদীস দেওয়া হয়েছে।

হাদীস ১ : হজরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতর নামাজ পড়েছেন এবং বলেছেন," হে কুরআনের অনুসারীগণ তোমরা বিতর নামাজ পড়। কেননা আল্লাহ তা’আলা একক, তিনি বিতর নামাজ পছন্দ করেন।" ( আবু দাউদ, হা- ১৪১৬। নাসাঈ, হা- ১৬৭৬। সহীহ তারগীব হাদিস নং ৫৯৪। ছহীহ ইবনু মাজাহ হা-১/১৯৩ )

হাদীস ২ : খারেজা ইবনে হুযাফা (রাঃ) বলেছন , রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা আমাদের নিকট এসে বললেন - " নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তােমাদেরকে একটি নামাজ দিয়ে অনুগ্রহ করেছেন। উহা তোমাদের জন্য লাল উটের চেয়ে উত্তম। তা হচ্ছে 'বিতর নামাজ'। এ নামাজ আদায় করার জন্য তিনি সময় নির্ধারণ করেছেন, এশার নামাজের পর থেকে ফজর উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যেকোনো সময়"। ( আবু দাউদ হা-১২০৮। তিরমিযী, হা-৪১৪। ইবনে মাজাহ, হা - ১১৫৮ )

হাদীস ৩ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর নামাজ গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করতেন। এমনকি তিনি সফরে থাকলেই এই নামাজ আদায় করা থেকে বিরত থাকতে না। এই সম্পর্কে ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম সফর অবস্থায় ফরয নামাজ ব্যতীত রাতের নফল নামাজ ইঙ্গিতের মাধ্যমে নিজ বাহনের উপর বসে বাহন যেদিকে যায় সে দিকেই পড়তেন। তিনি বিতরের নামাজ আরোহীর উপর পড়তেন। ( বুখারী হাদীস নং ৯৪৫ )

উপরোক্ত হাদীসসমূহ থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারছি যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বিতরের নামাজ পড়তে বলেছেন। বিতর নামাজের গুরুত্ব রয়েছে। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন এশার নামাজের পর বিতরের নামাজ আদায় করে নেওয়া। 

বিতর নামাজ পড়ার সময় কখন জেনে নিন

বিতর নামাজ পড়ার সময় হলো এশার নামাজ পড়ার পর থেকে ফজরের নামাজের সময় শুরু হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে আপনি যেকোনো সময় বিতর নামাজ আদায় করে নিতে পারবেন। বিতর নামাজ পড়ার সময় সম্পর্কে ইবনে হুজাফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে শেষ রাত অর্থাৎ ফজরের পূর্বে আদায় করে নেওয়া উত্তম। সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো রাতের প্রথম ভাগে আবার কখনো কখনো রাতের দ্বিতীয় ভাগে এবং অধিকাংশ সময় রাতের রাতের শেষ ভাগে বিতর নামাজ আদায় করেছেন। 

তবে আপনি যদি আশঙ্কা করেন যে শেষ রাতে আপনি নামাজ পড়তে পারবেন না তাহলে রাতের প্রথম ভাগেই আপনি বেতেরের নামাজ আদায় করে নিতে পারবেন কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু রাতের শেষ ভাগে নামাজের ফেরেশতাগণ আসে তাই রাতের শেষ ভাগে এই নামাজ পরা উত্তম কাজ।

বিতর নামাজ কি ওয়াজিব / বিতর নামাজ কি জেনে নেই

বিতর নামাজ ফরজ নামাজ নয়। বিতর নামাজ হলো সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। বিতর নামাজ ওয়াজিব নয়। তাই বিতর নামাজ পড়তে না পারলে কেউ গুনাহগার হবে না। 

দলিল : ফিকহুস সুন্নাহ ১-১৪৩, নাসাঈ হা-১৬৭৬, মিরআত ২-২০৭, ঐ, ৪-২৭৩-৭৪, শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২-১৭ 

বেতর নামাজ কয় রাকাত পড়তে হয় তা জেনে নিন

বেতর নামাজ এর রাকাতের সংখ্যা নির্দিষ্ট একটি সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়। বেতর নামাজ ১,৩,৫,৭,৯,১১ এভাবে বিজোড় সংখ্যায় পড়া জায়। তবে সর্বোচ্চ ১৩ রাকাত পর্যন্ত পড়ার কথা বলা হয়েছে।

বেতর নামাজ পড়ার নিয়ম আলোচনা

ইতিমধ্যেই আমরা বেতর নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারলাম। আমরা আরো জানলাম বেতরের নামাজের রাকাত কয়টি সেই সম্পর্কে। আমরা জানলাম বেতর নামাজ ১,৩,৫,৭,৯,১১,১৩ রাকাত পর্যন্ত হয়ে থাকে। এখন আমরা জানবো বিতরের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে। 

বিতর নামাজ তিন রাকাত পড়ার নিয়ম। অন্যান্য ফরজ নামাজের মতো দুই রাকাত নামাজ পড়ার পর প্রথম বৈঠকে বসে তাশাহহুদ পড়ুন কিন্তু সালাম ফেরাবেন না। 

তারপর তৃতীয় রাকাত পড়ার জন্য উঠে সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য কোনো সুরা বা আয়াত মিলাবেন। কিরাত (সুরা বা অন্য আয়াত মিলানোর পর) শেষ করার পর তাকবির তাহরীমা ( আলাহু আকবর ) বলে দুহাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে তাকবিরে তাহরিমার মতো হাত বাধুন। তারপর নিঃশব্দে দোয়া কুনুত পড়ুন। নিচে দোয়া কুনুত আরবীতে এবং বাংলা অনুবাদ সহ দেওয়া হয়েছে।

দোয়া কুনুত পড়ার পর আগের মতো রুকু, সিজদার পর শেষ তাশাহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে বিতরের নামাজ আদায় করুন।

এভাবে তিন রাকাত বিতরের নামাজ আদায় করতে হয়। বিতর নামাজ ও অন্যান্য নামাজের মধ্যে পার্থক্য হলো বিতর নামাজের শেষ রাকাতে রুকুতে যাওয়ার আগে তাকবীর দিয়ে হাত বেধে দোয়ায় কুনুত পড়তে হয়। তাছাড়া বিতর নামাজ মাগরিবের ফরয নামাজের অনুরূপ বলা চলে।

দোয়া কুনুত আরবীতে : 


اَللَّهُمَّ اِنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ

দোয়া কুনুত আরবী উচ্চারণ : 

আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা, ওয়া নাস্তাগফিরুকা, ওয়া নু-মিনু বিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু 'আলাইকা, ওয়া নুছনি -আলাইকাল খাইর, ওয়া নাশকুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ, ওয়া নাতরুকু মাই ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া লাকানুসল্লী, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস-আ, ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্ফারি মুল-হিক্ক।




দোয়া কুনুতের বাংলা অনুবাদ : 

হে আল্লাহ আমরা তোমারই সাহায্য চাই, তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল কিছু তোমার দিকে ন্যস্ত করি। 

আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি অকৃতজ্ঞ হই না, এবং যারা তোমার অবাধ্য হয় তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদেরকে পরিত্যাগ করি। হে আল্লাহ আমরা তোমারই দাসত্ব করি তোমারই জন্য নামাজ পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি, আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। 

আমরা তোমারই রহমত, আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।

বিতর নামাজে কোন সূরা পড়তে হয় তা জেনে নিন

বিতর নামাজে কোন সূরা পড়া হবে সেটি বিষয়টি আল-কুরআন বা হাদিস এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মতামত থাকতে পারে। কিছু মুহাদিস বলেছেন যে বিতর নামাজে কোন সূরা পড়া না হলেও চলবে। 

তবে সাধারণত বিতর নামাজে দুইটি সূরা পড়া হয়। এদের হলো সূরা আল-কাফিরুন এবং সূরা আল-ইখলাস। সূরা আল-কাফিরুন পড়ে নামাজের প্রথম রাকাতে এবং সূরা আল-ইখলাস পড়ে নামাজের শেষ রাকাতে পড়ে বিতরের নামাজ পড়া যাবে।

আমাদের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আজকের নিবন্ধ টি পড়ে আশা করি বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আপনার যদি কোনো মন্তব্য বা কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। আজ এই পর্যন্তই ভালো থাকবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
Facebook Page
telegram
প্রিমিয়াম সাজেশন গ্রুপ [9 to 12]

আপনি যদি নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তাহলে নিচের দেওয়া গ্রুপে জয়েন করুন। এই গ্রুপে সকল প্রিমিয়াম সাজেশন এবং নোট পেয়ে যাবেন। আশা করি আপনার পরীক্ষায় অনেক উপকার হবে।

গ্রুপ : এখানে ক্লিক করুন