বাক্য কাকে বলে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ করো | বাক্য চেনার উপায় [বাক্য A to Z]

বাক্য কাকে বলে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ করো
বাক্য কাকে বলে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ করো


বাক্য কাকে বলে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ করো | বাক্য চেনার উপায়

আসসালামু আলাইকুম আশা করি আপনি ভালো আছেন। আমাদের এই পোস্টটি বাছাই করে নেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। 

বাক্য কাকে বলে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে আমাদের জানা থাকা জরুরি বা অত্যন্ত প্রয়োজন। 

তাই অনেকেই গুগলে সার্চ করেন বাক্য কাকে বলে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে। আজকের পোস্ট থেকে আমরা বাক্যের খুঁটিনাটি সকল বিষয়ে আলোচনা করবো। 

আশা করি আপনার কাছে এটি একটি দারুন পোস্ট হতে চলেছে। তাহলে চলুন আজকে আমরা জেনে নেই বাক্য কাকে বলে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ ইত্যাদি সম্পর্কে।

বাক্য কাকে বলে গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার

বাক্যের সম্পর্কে জানার জন্য প্রথমেই আমাদের জেনে নেওয়া জরুরী যে বাক্য কাকে বলে। 

বাক্য হলো একগুচ্ছ শব্দের সমন্বয়ে গঠিত কর্তার মনের ভাব প্রকাশক। অর্থাৎ, যে সুবিন্যস্ত পদ বা পদসমষ্টি দ্বারা কর্তার মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে তাকে বাক্য বলে। 

এককথায় বাক্য হলো পদের সমষ্টি। তবে শুধু পদের সমষ্টি হলেই বাক্য হয়না। বাক্য হতে হলে বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পেতে হবে। উদাহরণ : আমি প্রতিদিন বিকালে মাঠে খেলতে যাই। 

ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, কোনো ভাষায় যে উক্তির স্বার্থকতা রয়েছে এবং গঠনের দিক দিয়ে যা স্বয়ংসম্পূর্ণ, সেসকল একক উক্তিকে ব্যাকরণের ভাষায় বাক্য বলে।

বাক্যকে গঠন অনুসারে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, গঠন অনুসারে বাক্য ৩ (তিন) প্রকার। যথা : 

১/ সরল বাক্য

২/ যৌগিক বাক্য

৩/ জটিল বাক্য বা মিশ্র বাক্য

বাক্যকে সাধারণত এই তিনভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এখন আমরা জানবো সরল বাক্য কাকে বলে, যৌগিক বাক্য কাকে বলে এবং জটিল বা মিশ্র বাক্য কাকে বলে।

সরল বাক্য : যে বাক্যে একটি মাত্র কর্তা এবং একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থাকবে তাকে সরল বাক্য বলে। 

উদাহরণ : আমি ভাত খাই।

যৌগিক বাক্য : দুই বা তার অধিক সরল বা জটিল বাক্য একত্রিত হয়ে যে একটি সম্পূর্ণ বাক্য গঠন করে তাকে যৌগিক বাক্য বলে।

যৌগিক বাক্যের মধ্যে এবং, ও, কিন্তু, অথবা, অথচ, তারপর, সুতরাং, কিংবা, বরং, তথাপি, নতুবা, যদ্যপি ইত্যাদি থাকে। 

উদাহরণ: তুমি অপরাধ করেছো, সুতরাং তোমার শাস্তি হবে।

জটিল বা মিশ্র বাক্য : জটিল বাক্যের অপর নাম মিশ্র বাক্য। যে বাক্যে একটি প্রধান খন্ড-বাক্যের সাথে এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য পরস্পর যুক্ত হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য গঠন করে। তাকে জটিল বাক্য বা মিশ্র বাক্য বলে।

উদাহরণ : যদি তুমি আসো, আমি যাবো। যে ব্যক্তি কষ্ট করে, সে ব্যক্তি শান্তি লাভ করে।





বাক্য চেনার উপায় (টেকনিক)

উপরের তথ্য গুলো থেকে আমরা জানতে পারলাম বাক্য কাকে বলে এবং বাক্যের শ্রেণীবিভাগ। 

এখন আমরা যেকোনো পরীক্ষায় বা যেকোনো জায়গায় দেখার সাথে সাথেই জাতে বলে দিতে পারি এটি কি ধরনের বাক্য সেই সম্পর্কে জানবো। অর্থাৎ, বাক্য চেনার উপায়। 

সরল বাক্য চেনার উপায়

সরল বাক্যে একটি মাত্র ক্রিয়া থাকবে। যেমন: আমি ভাত খাই। এখানে খাই ক্রিয়া এই বাক্যে খাই ব্যতীত আর কোনো ক্রিয়া নেই, তাই আমরা একটি ক্রিয়া দেখলেই বুঝবো এটি সরল বাক্য। 

বাক্যে কর্তার উপস্থিতি নাও থাকতে পারে। যেমন এসো এসো আমার কাছে এসো। এখানে কোনো কর্তার উপস্থিতি নেই। তাই এটি সরল বাক্য। 

আবার সরল বাক্যে অনেকগুলো অসমাপিকা ক্রিয়া থাকতে পারে। যেমন : আকাশ বাড়ি এসে, সারাদিন ঘুরে ক্লান্ত হয়ে সন্ধায় বাড়ি ফিরে এসে খেয়ে দেয় শুয়ে পড়লো। এখানে অনেকগুলো অসমাপিকা ক্রিয়া বিদ্যমান রয়েছে তাই বলা যায় এটি একটি সরল বাক্য।

যৌগিক বাক্য চেনার উপায়

দুটি বা দুটির অধিক জটিল বা মিশ্র বাক্য যদি এবং, ও, কিন্তু, অথবা, অথচ, কিংবা, বরং, তথাপি, তারপর, সুতরাং, নতুবা, যদ্যপি ইত্যাদি দ্বারা যুক্ত থাকতে দেখা যায় তবে চিনে নিতে হবে সেটি যৌগিক বাক্য।

যেমন : দুঃখ এবং বিপদ একই সাথে আসে।

জটিল বাক্য চেনার উপায় | মিশ্র বাক্য চেনার উপায়

জটিল বা মিশ্র বাক্যের অদ্য অক্ষর সাধারণত 'য' দিয়ে শুরু হয়। তাই কোনো বাক্যের শুরুতে 'য' থাকলে সেটি জটিল বাক্য হিসেবে চিনে নিতে হবে।

যেমন : ঠিক আছে, আপনি যখন বলছেন, বিষয়টি আমি দেখব।

জটিল বা মিশ্র বাক্যের মধ্যে দুইটি সমাপিকা ক্রিয়া বিদ্যমান থাকে। 

যেমন : যখন তুমি আসবে, তখন আমি যাবো।

[ নোট : তবে সবসময় সব জটিল বাক্যের শুরুতে য বর্ন নাও থাকতে পারে।]

এভাবে আমরা বাক্য চিনতে পারি। আমরা বাক্য দেখেই বলতে পারবো এটি কোন ধরনের বাক্য।

অর্থ অনুসারে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ

অর্থ অনুসারে বাক্যকে সাত ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা :
  • বিবৃতি-মূলক বাক্য,
  • প্রশ্ন-বাচক বাক্য,
  • অনুজ্ঞা-বাচক বাক্য,
  • ইচ্ছা বা প্রার্থনা-সূচক বাক্য,
  • কার্য-কারণাত্মক বাক্য,
  • সন্দেহ-সূচক বাক্য,
  • আবেগ-সূচক বাক্য।
চলুন আমরা আরো বিস্তারিত জেনে নেই এই বাক্য গুলো সম্পর্কে। 

বিবৃতিমূলক বাক্য

যে বাক্য দ্বারা কোন কিছু বিবৃতি বা বর্ণনা করা হয় তাকে বিবৃতিমূলক বাক্য বলে। যেমন : করীম গান গায়, রহিম মাঠে যায়, গরু ঘাস খায় ইত্যাদি।

বিবৃতিমূলক বাক্য আবার দুই প্রকার। যথা :

  • অস্থিবাচক বা হ্যাঁ বোধক বাক্য।
  • নেতিবাচক বা না বোধক বাক্য।

অস্থিবাচক বা হ্যাঁ বোধক বাক্য

যে সক বাক্যে দ্বারা কোন ঘটনা, সংবাদ বা অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়। তাকে অস্থিবাচক বা হ্যাঁ বোধক বাক্য বলে।

যেমন – সে চুপ করে রইল।

নেতিবাচক বা না বোধক বাক্য 

যে সকল বাক্য দ্বারা কোন ঘটনা, সংবাদ বা অস্তিত্ব স্বীকার অস্বীকার করা হয়। তাকে নেতিবাচক বা না বোধক বাক্য বলে। যেমন – সে চুপ করে রইল না। সে আমার কথা শুনলো না।

প্রশ্নবাচক বাক্য

যে সকল বাক্যের দ্বারা কোনো কিছু জিজ্ঞাসা বা প্রশ্ন করা হয় বা জানতে চাওয়া হয়, তাকে প্রশ্নবোধক বাক্য বলে। প্রশ্নবোধক বাক্য বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) থাকে। যেমন, তোমার পছন্দের ফুল কি? তোমার বাসা কোন জেলায়? তুমি কবে এসেছো? ইত্যাদি।

অনুজ্ঞাবাচক বাক্য

যে সকল বাক্য দ্বারা আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, বিধি , নিষেদ ইত্যাদি বুঝায় তাকে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য বলে। যেমন, সবসময় ভালো পথে চলবে, সদা সত্য কথা বলবে, দয়া করে এখানে আসুন, খাতাটি টেবিলে রাখো। ইত্যাদি।

ইচ্ছাসূচক বাক্য

যে সকল বাক্য দ্বারা বক্তার মনের ইচ্ছা, প্রার্থনা, বাসনা, কামনা ইত্যাদি প্রকাশ পায়, তাকে ইচ্ছাসূচক বাক্য বলে। যেমন : তুমি সুখী হও। তোমার যাত্রা শুভ হোক ইত্যাদি।

কার্যকারণাত্মক বাক্য

যে সকল বাক্যের মাধ্যমে কোন কারণ বা শর্ত বোঝায়, তাকে কার্যকারণাত্মক বাক্য বলে। যেমন : যদি মনোযোগ দিয়ে না পড়ো, তাহলে পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করবে।

সন্দেহসূচক বাক্য

যে সকল বাক্যের দ্বারা কোন সংশয়, সন্দেহ বা কোন সম্ভাবনা প্রকাশ পায় তাকে সংশয়সূচক বলে। যেমন : হয়তো একদিন সে আসবে।

বিস্ময়সূচক বাক্য

যে বাক্যের দ্বারা বক্তার আবেগ, অনুভূতি, বিস্ময় প্রকাশিত হয়, তাকে বিস্ময়সূচক বাক্য বলে। বিস্ময়সূচক বাক্যে বাক্যের শেষে বিস্ময়সূচক চিহ্ন (!) থাকে। যেমন :

আহ কি মজা!

পাখিটি কত সুন্দর!

সাধারণত লোকেরা যেসকল বিষয়ে প্রশ্ন করে থাকে

লোকেরা বাক্য সম্পর্কে যে সকল প্রশ্ন করে থাকে উপরের লেখা গুলো পড়লেই সব উত্তর পাওয়া যাবে। তবুও আরেকবার হাইলাইট করে দিলাম।

বাক্য কাকে বলে গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার

বাক্য হলো একগুচ্ছ শব্দের সমন্বয়ে গঠিত কর্তার মনের ভাব প্রকাশক। অর্থাৎ, যে সুবিন্যস্ত পদ বা পদসমষ্টি দ্বারা কর্তার মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে তাকে বাক্য বলে।

শব্দ ও বাক্য কাকে বলে

কয়েকটি বর্ণ নিয়ে গঠিত হয় শব্দ এবং কয়েকটি শব্দ নিয়ে গঠিত হয় বাক্য। অর্থাৎ বাক্যের একটি উপাদান হলো শব্দ। আর শব্দের উপাদান হলো বর্ণ।

বাক্যের গঠনগত শ্রেণীবিভাগ কয়টি

বাক্যের গঠনগত শ্রেণীবিভাগ তিনটি। যথা : ১/ সরল বাক্য ২/ যৌগিক বাক্য ৩/ জটিল বাক্য বা মিশ্র বাক্য

অর্থ অনুসারে বাংলা বাক্যের শ্রেণীবিভাগ উদাহরণসহ

অর্থ অনুসারে বাক্যকে সাত ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা : ১/ বিবৃতি-মূলক বাক্য, ২/ প্রশ্ন-বাচক বাক্য, ৩/ অনুজ্ঞা-বাচক বাক্য, ৪/ইচ্ছা বা প্রার্থনা-সূচক বাক্য, ৫/ কার্য-কারণাত্মক বাক্য, ৬/ সন্দেহ-সূচক বাক্য, ৭/ আবেগ-সূচক বাক্য।

বাক্য কাকে বলে উদাহরণ দাও

কয়েকটি শব্দ একত্রে মিলে যদি বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করতে পারে তাহলে তাকে বাক্য বলে। উদাহরণ : আমি মাছ খাই, আমি স্কুলে যাই, রহিম মাঠে ফুটবল খেলে, সে আমাদের বাড়ি এসেছে ইত্যাদি।

সরল বাক্য কাকে বলে

যে সকল বাক্য একটি মাত্র অসমাপিকা ক্রিয়া বিদ্যমান থাকে সেসকল বাক্যকে সরল বাক্য বলে। উদাহরণ : আমি বাজারে যাই,

জটিল বাক্য চেনার উপায় কি

জটিল বা মিশ্র বাক্যের অদ্য অক্ষর সাধারণত 'য' দিয়ে শুরু হয়। তাই কোনো বাক্যের শুরুতে 'য' থাকলে সেটি জটিল বাক্য হিসেবে চিনে নিতে হবে। যেমন : ঠিক আছে, আপনি যখন বলছেন, বিষয়টি আমি দেখব। জটিল বা মিশ্র বাক্যের মধ্যে দুইটি সমাপিকা ক্রিয়া বিদ্যমান থাকে। যেমন : যখন তুমি আসবে, তখন আমি যাবো। [ নোট : তবে সবসময় সব জটিল বাক্যের শুরুতে য বর্ন নাও থাকতে পারে।]

অনুজ্ঞাবাচক বাক্য কাকে বলে

যে সকল বাক্য দ্বারা আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, বিধি , নিষেদ ইত্যাদি বুঝায় তাকে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য বলে। যেমন, সবসময় ভালো পথে চলবে, সদা সত্য কথা বলবে, দয়া করে এখানে আসুন, খাতাটি টেবিলে রাখো ইত্যাদি।


আমাদের শেষ কথা

আশা করি এই নিবন্ধটি পড়ে কিছু হলেও শিখতে পেরেছেন। আপনার কাছে যদি এই পোস্ট টি ভালো লেগে থাকে তাহলে পোস্টের লিংক কপি করে আপনার ফেসবুক আইডিতে একটি শেয়ার করে দিবেন। 

আমাদের ফেসবুক পেইজের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। আজকের পোস্ট থেকে আমরা জানলাম বাক্য কাকে বলে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ এবং বিভিন্ন প্রকার বাক্য চেনার উপায়। 

বাক্যের সব কিছু আমরা এই একটি পোস্টেই জানতে পারলাম। যেকোনো ধরনের মতামত জানাতে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন, ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
Facebook Page
telegram
প্রিমিয়াম সাজেশন গ্রুপ [9 to 12]

আপনি যদি নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তাহলে নিচের দেওয়া গ্রুপে জয়েন করুন। এই গ্রুপে সকল প্রিমিয়াম সাজেশন এবং নোট পেয়ে যাবেন। আশা করি আপনার পরীক্ষায় অনেক উপকার হবে।

গ্রুপ : এখানে ক্লিক করুন