রোযা ভঙ্গের কারণ, রোযার প্রকারভেদ, রোজা ভেঙ্গে গেলে করনীয় কি জেনে নিন (কাফফারা কিভাবে দিতে হয় জেনে নিন)

রোযা ভঙ্গের কারণ

আসসালামু আলাইকুম, আপনি কি রোজা ভঙ্গের কারণ জানতে চান? আপনি কি জানতে চান রোজা ভেঙ্গে গেলে কি করতে হবে? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। 

আসছে ২০২৪ সালের  মার্চ মাসের ১২ তারিখে প্রথম রোজা। মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার অশেষ রহমত হচ্ছে এই রোজার মাস এবং রোজা। 

বিশ্বের সকল মুসলমান রমজানে রোজা পালন করে আল্লাহর ইবাদাত করে থাকে। অনেকেই জানে না রোযা ভঙ্গের কারণ কি? রোজা ভাঙ্গার প্রধান কারন গুলো এবং রোজা ভেঙ্গে গেলে কি করনীয় সেই সম্পর্কে এই পোস্টে জানতে পারবেন।

রোযা ভঙ্গের কারণ সমূহ জেনে নিন

শরিয়তে রোযা ভঙ্গের কারণ হিসেবে যেগুলো বর্ণনা করা হয়েছে নিচে সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। রোযা ভঙ্গের কারণগুলো হচ্ছে -

১.ইচ্ছাকৃতভাবে পানহার করাঃ কোন রোজাদার ব্যাক্তি যদি রোজা আছে জানা সত্ত্বেও কোন কারনে পানহার করে ফেলে তাহলে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে।

২.ইচ্ছাকৃত বমি করাঃ কোন কারনে যদি রোজাদার ব্যাক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জোর করে বমি করে তাহলে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে।

৩.স্ত্রী সহবাস করাঃ কোনো রোজাদার ব্যক্তি সিয়াম অবস্থায় যদি স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তার উক্ত রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং উক্ত রোজা সেই ব্যক্তিকে কাজা করতে হবে। পরকীয়া বা হারাম সম্পর্কে লিপ্ত থাকলে রোজা হবে না।

৪.পানাহারের কাজ করে এমন ইঞ্জেকশন গ্রহণঃ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে জীবনীশক্তি বৃদ্ধি বা অন্য কোনো কারনে শরীরে কোনো ঔষধ প্রয়োগ করলে সেই ব্যক্তির রোজা ভেঙ্গে যাবে। যেমন গ্লুকোজ জাতীয় ইঞ্জেকশন ব্যবহারে রোজাদার ব্যক্তির রোজা ভেঙে যাবে।

৫.মহিলাদের হায়েয বা নিফাস অর্থাৎ মাসিক রক্তস্রাবঃ মহিলাদের মাসিক জাতীয় রক্তস্রাব রোজা ভঙ্গের উল্লেখযোগ্য কারন এছাড়া সন্তান প্রসব করলেও রোজা ভেঙ্গে যায়। তবে পবিত্র হওয়ার পর সম সংখ্যক রোজা করে নিতে পারবে।

৬. মুখ খোলা রাখার কারনে বৃষ্টির পানি গলা দিয়ে প্রবেশ করা বা পান করাঃ বৃষ্টির পানি যদি কোন কারনে গলা দিয়ে প্রবেশ করে বা রোজাদার ব্যাক্তি পান করে ফেলে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যায়।

৭.হৈস্তমন্থুন বা অন্য কোনো উপায়ে বির্যপাত ঘটানোঃ হৈস্তমন্থুন বা অন্য কোনো উপায়ে বির্যপাত ঘটালে রোজা ভেঙ্গে যায়। তবে স্বপ্নদোষ বা রোগের কারণে বীর্যপাত হলে রোজা ভঙ্গ হবে না। কেননা এতে রোজাদার ব্যক্তির নিজ থেকে কোনো ইচ্ছা ছিলো না।

৮.ছোলা পরিমান বা তার চেয়ে বড় খাদ্য গিলে ফেলাঃ অনেক সময় খাবার খাওয়ার পর খাদ্যের অংশ বিশেষ দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকে সেই খাদ্যঅংশ বিশেষ পুনরায় গ্রহনে রোজা ভঙ্গ হবে।

৯.সাহারি গ্রহণ করার সময় রয়েছে ভেবে পানহার করাঃ রমজান মাসে সেহরি এবং ইফতার উভয় ক্ষেত্রে কিছু নিদ্ধারিত সময় রয়েছে, সুবহ সাদিক শেষ হয়ে যাওয়ার পর খাদ্য গ্রহণ করলে তার রোজা ভঙ্গ হবে। 

১০.কুলি করার সময় অসতর্কতার কারনে কন্ঠনালিতে পানি প্রবেশ করাঃ নামাজের ওযু বা যেকোনো সময় কুলি করার সময় যদি অসাবধানতায়ও পানি গলার ভেতর প্রবেশ করে তবে সেই ব্যাক্তির রোজা ভঙ্গ হবে।

রোজা হালকা হয়ে যায় যেসব কারনে জেনে নিন

রোজার আবার কিছু নির্ধারিত মাকরুহ রয়েছে। মাক্রুহ হচ্ছে রোজা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যায় না, কিন্তু রোজা হালকা হয়ে যায়। এই সমস্ত কাজ করলে রোজার সওয়াব কমে যায়।

রোযা ভঙ্গের কারণ জানার পাশাপাশি আমাদেরকে অবশ্যই রোজা হালকা হয়ে যাওয়ার কারণ সমূহ বা মাক্রুহ রোজা এর কারণ গুলো জেনে নিতে হবে। 

১. গড়গড়া কুলি করা অথবা নাকি বেশি গভীরে পানি দেওয়াঃ অনেক সময় দেখা যায় ওযু করার সময় বা গোসল করার সময় নাকি অতিরিক্ত পানি দেওয়ার ফলে নাক দিয়ে পানি ঢুকে যায়। আর এমনটা হলে রোজা হালকা হয়ে যাবে।

২. অপ্রয়োজনে কোনো জিনিস চিবানোঃ কোন রোজাদার ব্যক্তি যদি অপ্রয়োজনে গালের মধ্যে কিছু নিয়ে চিবুতে থাকে তাহলে তার রোজা হালকা হয়ে যাবে বা মাকরূহ হয়ে যাবে।

৩. তরকারি বা তৈরীকৃত খাবারের স্বাদ গ্রহণ করে ফেলে দেওয়াঃ সাধারণত লবন দেখার জন্য অনেকেই এই ভুল করে। তবে উল্লেখ্য যে, কাজে অব্যাহত মুনিব তার কর্ম পুরিপুন্য ভাবে করতে এবং কোনো নারীর স্বামী বদমেজাজী হলে জিহবার অগ্রভাগ দিয়ে লবন চেখে দেখে তা ফেলে দেয় তবে সেক্ষেত্রে সমস্যা হবে না।

৪. পরনিন্দা করা, মিথ্যা বলা, নাটক -সিনেমা দেখা,গান শোনা ও যেকোনো গুনাহের কাজ করলে রোজাদার ব্যক্তির রোজা হালকা হয়ে যায়।

৫. গোসল ফরজ হয়েছে এমন অবস্থায় নাপাক থেকে সারাদিন অতিবাহিত করা।

৬. মুখে অধিক পরিমান থুথু জমিয়ে একত্রে গিলে ফেলা।

৭. রোজাদার ব্যক্তি রোজা অবস্থায় ঝগড়া করা বা গালিগালাজ করা।

৮. ঠোঁটে লিপস্টিক ব্যবহার করার ফলে যদি তা মুখের ভেতরে গেলে রোজা হালকা হয়ে যায় বা মাক্রুহ হয়।


রোজা ভেঙ্গে গেলে করণীয় বা কাফফারা কিভাবে দিতে হয় জেনে নিন

অনেকেরই অনিচ্ছায় রোজা ভেঙে যায় বা কোন কারনে রোজা মাকরূহ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি সেই সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

রোজা রেখে কোন কারণ বা অসুবিধার জন্য রোজা ভেঙে ফেললে পরে সেই রোজাটি কাজা আদায় করতে হবে। 

কাজা হল একটি রোজার পরিবর্তে আরেকটি রোজা রাখা। কাজা রোজা যে কোন সুবিধা মত সময়ে আদায় করা যাবে। তবে সব কাজা রোজা একসাথে আদায় করা জরুরী নয়।

রোজা রেখে কোন কারণ ছাড়া শয়তানের ধোকায় বা তাড়নায় অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভাঙলো করলে এর জন্য কাজা এবং কাফফারা উভয় আদায় করতে হয়। কাফফারা তিনভাবে আদায় করা যায়।

  • ১। কোন একটি গোলামকে আজাদ করা বা দাস মুক্ত করার মাধ্যমে।
  • ২। ৬০ জন মিসকিন কে দুই বেলা ভালোভাবে তৃপ্তি সহকারে খাওয়ানোর মাধ্যমে। 
  • ৩। ধারাবাহিকভাবে ষাটটি (৬০ টি) রোজা পালন করার মাধ্যমে।

এই উপরের দেওয়া যে কোন একটি পালন করার মাধ্যমে কাফফারা আদায় করতে পারেন। ফরজ রোজা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বা শয়তানের ধোকায় একটি রোজা ভঙ্গ করা হয়, তাহলে একটি রোজার বদলে ৬০ টি রোজা কাফফারা দিতে হয়।

বলা যায়, একটি ফরজ রোজা যৌক্তিক কারণ ছাড়া ভাঙলে ৬০ টি রোজা কাফফারা দিতে হবে, দুইটি রোজা ভাঙলে ৬২টি রোজা কাফফারা দিতে হবে, তিনটি রোজা ভাঙলে ৬৩ টি রোজা কাফফারা দিতে হবে, অনুরূপভাবে যতগুলো রোজা ভাঙবেন ততগুলো রোজা ৬০ এর সঙ্গে যুক্ত হবে।

কাফফারা রোজার ৬০ টি রোজা একসাথে পরপর পালন করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি সাতটি রোজা পালনের সময় কোন একটি রোজা ভঙ্গ করেন তাহলে পুনরায় শুরু থেকে কাফফারা দিতে হবে। অর্থাৎ আবার এক থেকে শুরু করতে হবে।

যাদের উপর রোজা ফরজ হয়নি, অনেক সময় বড়দের অনুপ্রেরণায় তারা রোজা রাখে এবং ভেঙে ফেলে। সেক্ষেত্রে তাদের কাফফারা বা কাজা রোজা রাখা জরুরি করা হয়নি।

পরিশেষে আমাদের কথা

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা জানতে পেরেছেন রোযা ভঙ্গের কারণ এবং রোজা ভেঙ্গে গেলে কি করতে হয়, কিভাবে কাজা রোজা রাখতে হয়, কাফফারা কিভাবে দিতে হয় সেই সম্পর্কে। 

আজকের পোস্ট সম্পর্কে আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে জানাতে পারেন আমাদেরকে। আপনিও যদি কিছু জানাতে পারেন অবশ্যই কমেন্টে করে জানাবেন। আজ এই পর্যন্ত, আল্লাহ্‌ হাফেজ।

ট্যাগঃ রোজার ভঙ্গের কারণ, রোজার কাফফারা কিভাবে দিতে হয়, রোজার কাফফারা কি, রোজার কাফফারা, রোজা হালকা হওয়ার কারণসমূহ, রোজা হালকা হওয়ার কারণ, রোজা রেখে গালি দিলে কি হয়, রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ, রোজা ভাঙার কারণ কয়টি ও কি কি, রোজা ভাঙার কারণ, রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ কি কি, রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ, রোজা ভঙ্গের কারণ কি কি, রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি, রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি, রোজা ভঙ্গের কারণ, রোজা ভঙ্গের কাফফারা, মাকরুহ মানে কি, মাকরুহ খাবার, কি কি কারনে রোজা ভেঙ্গে যায়
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
Facebook Page
telegram
প্রিমিয়াম সাজেশন গ্রুপ [9 to 12]

আপনি যদি নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তাহলে নিচের দেওয়া গ্রুপে জয়েন করুন। এই গ্রুপে সকল প্রিমিয়াম সাজেশন এবং নোট পেয়ে যাবেন। আশা করি আপনার পরীক্ষায় অনেক উপকার হবে।

গ্রুপ : এখানে ক্লিক করুন