পরিপাকতন্ত্র কাকে বলে সংজ্ঞা সহ ব্যাখ্যা
পরিপাকতন্ত্র কাকে বলে সংজ্ঞা সহ ব্যাখ্যা দেখুন
পরিপাকতন্ত্র কাকে বলে |
আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। একজন ছাত্র প্রশ্ন করেছেন " পরিপাকতন্ত্র কাকে বলে?" আজকে আমরা এই সম্পর্কে একটা সুন্দর আর্টিকেল পড়বো যার মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো পরিপাকতন্ত্র কাকে বলে এবং এই তন্ত্রের কাজ সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
পরিপাক যেটা প্রতিটা মানুষের এমনকি মহাবিশ্বের সমস্ত প্রাণীর একটি অত্যাবশ্যকীয় জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া। পরিপাকের মাধ্যমে জটিল খাদ্যবস্তু ভেঙে দ্রবণীয় সরল ও তরল এবং দেহকোষের গ্রহণযোগ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুতে পরিণত হয়। আর প্রনিকোষ এই পরিপাক এর মাধ্যমেই খাবার পায় এবং শক্তির যোগান দেয়।
তাহলে বুঝতেই পারছেন পরিপাক কতটা গুরুত্বপূর্ন প্রতিটা প্রাণীর জন্য। আচ্ছা এবার আসি পরিপাকতন্ত্র কাকে বলে। পরিপাকতন্ত্র হচ্ছে পরিপাক সংঘটনের জন্য যে সমস্ত অঙ্গ একত্রে কাজ করে সেই সমস্ত অঙ্গ নিয়েই পরিপাকতন্ত্র। প্রিয় শিক্ষার্থী, পরিপাক সংঘটনের জন্য দেহের কয়েকটি তন্ত্র একত্রে কাজ করে তাই এই পুরো সিস্টেম টা কে পরিপাকতন্ত্র বা Digestive System বলা হয়।
পরিপাকতন্ত্র কাকে বলে সংজ্ঞা কি তা জেনে নেই
প্রিয় শিক্ষার্থী, পরিপাকতন্ত্র কাকে বলে এই প্রশ্নের উত্তর হলো - যে তন্ত্রের মাধ্যমে খাদ্যবস্তুর পরিপাক ও শোষন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাকে পরিপাকতন্ত্র ( Digestive System ) বলে। আবার যে তন্ত্রের মাধ্যমে পরিপাক ক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাকেই পরিপাকতন্ত্র বলা হয়। পরিপাকতন্ত্রের আরেক নাম পৌষ্টিকতন্ত্র।
💡 আরও পড়ুন : পরিপাক কাকে বলে এবং পরিপাক কি পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ।
পরিপাকতন্ত্রকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে
মানবদেহের পরিপাকতন্ত্র পরিপাকনালি এবং সংশ্লিষ্ট পরিপাকগ্রন্থি নিয়ে গঠিত। যেমন :
- ক. পরিপাকনালি বা পৌষ্টিকনালি
- খ. পরিপাকগ্রন্থি বা পৌষ্টিকগ্রন্থি
পরিপাকনালি বা পৌষ্টিকনালি এর মধ্যে আবার আটটি অংশ রয়েছে সেগুলো হলো :
- ১. মুখছিদ্র
- ২. মুখগহ্বর
- ৩. গলবিল
- ৪. অন্ননালি
- ৫. পাকস্থলী
- ৬. ক্ষুদ্রান্ত্র
- ৭. বৃহদন্ত্র
- ৮. পায়ু
আবার, পরিপাকগ্রন্থি বা পৌষ্টিকগ্রন্থি এর মধ্যেও পাঁচটি অংশ রয়েছে। যথা :
- ১. লালাগ্রন্থি
- ২. যকৃৎ
- ৩. অগ্ন্যাশয়
- ৪. গ্যাস্ট্রিকগ্রন্থি
- ৫. আন্ত্রকগ্রন্থি
মানবদেহের পরিপাকতন্ত্রের ছবি দেখে নেই
প্রিয় শিক্ষার্থী, পরিপাকতন্ত্রের ছবি দেখে নিলে আমাদের বুঝতে সুবিধা হবে। নিচে মানবদেহের পরিপাকতন্ত্রের কয়েকটি গাঠনিক চিত্র দেওয়া হলো তোমরা পরিপাকতন্ত্রটি ভালোমত দেখে নাও।
পরিপাকতন্ত্র কাকে বলে ০১ |
পরিপাকতন্ত্র কাকে বলে ০২ |
পরিপাকতন্ত্র কাকে বলে ০৩ |
উপরের ছবিগুলো হলো পরিপাকতন্ত্রের ছবি। ছবি গুলো থেকে তোমরা দেখতেই পেলে মানবদেহে পরিপাকতন্ত্র কিভাবে থাকে। মানবদেহের মুখ থেকে পায়ু পর্যন্ত পরিপাকতন্ত্র থাকে। মুখ থেকে পরিপাক প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং তা শেষ হয়ে পায়ুতে গিয়ে।
পরিপাকতন্ত্রের কাজের প্রকারভেদ কি তা দেখে নেই
পরিপাকতন্ত্রের কাজ দুই ভাগে হয়ে থাকে যথা : যান্ত্রিক পরিপাক এবং রাসায়নিক পরিপাক।
পরিপাকের সময় যে প্রক্রিয়ায় গৃহীত খাদ্যের পরিশোষণযোগ্য অংশ জীবাণু গলাদুকরণ ও পুষ্টিক নালী অতিক্রমের সময় নারীর ভিতর বিভিন্ন অংশের স্পেশল সঞ্চালনের ফলে গাঠনিক ভাঙ্গনের মাধ্যমে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরায় পরিণত হয় এবং তা এনজাইনের ক্রিয়া তলের বৃদ্ধি ঘটায় তাকে যান্ত্রিক পরিপাক বলে।
পরিপাকের সময় গৃহীত খাদ্যের পরিপাকযোগ্য অংশ যান্ত্রিক পরিপাকের পর পরই মুখ পাকিস্থলি ও অন্তরে এসিড ক্ষার ও এনজাইমের সহায়তায় রাসায়নিক ভাঙ্গনের মাধ্যমে দেহ কোষের গ্রহণীয় উপাদানে পরিণত হওয়াকে রাসায়নিক পরিপাক বলা হয়।
💡 আরও পড়ুন : কলয়েডধর্মী পদার্থ কাকে বলে পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ
মানুষের পরিপাকতন্ত্রের বা পৌষ্টিকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশের প্রধান প্রধান কার্যাবলী জেনে নেই
মুখগহ্বর : খাদ্যকে ছোট ছোট টুকরায় পরিণত করে।
লালা গ্রন্থি : খাদ্যকে নরম ও পিচ্ছিল করে শর্করা ভক্ষণ করতে সাহায্য করে।
গলবিল : খাবারকে মুখোপাধ্যায় থেকে অন্যনালিতে পৌঁছে দেয়।
অন্যনালি : এর মাধ্যমে খাদ্যবস্তু পাকিস্থলিতে পৌঁছে
যকৃত : বিভিন্ন জৈব অনুর ভাঙ্গন ও গ্রহণ করিয়ে ভিটামিন ও আয়রন সঞ্চয় করে। পুরনো রক্তকণিকা ধ্বংস করে। পিত্তরস উৎপন্ন করে। বিষ অপসারণ করে।
পিত্তথলি : পিত্তরস জমা রাখে।
পাকিস্থলি : খাদ্যবস্তু সাময়িকভাবে জমা রাখে। পেপসিন এনজাইম প্রোটিনের ভাঙ্গন ঘটায়। HCl কে সক্রিয় করে এবং খাদ্য বাহিত জীবাণু ধ্বংস করে। মিউকাস পাকিস্থলীর প্রাচীর কে রক্ষা করে। অল্প পরিশোষণ ঘটে।
ক্ষুদ্রান্ত : পরিপাক সম্পন্ন করে। মিউকাস অন্ত্রপ্রাচীর কে সুরক্ষা করে। খাদ্য রসের পরিশোষণ ঘটে। প্রটিয়েজ প্রোটিনের পরিপাক ঘটায়। সুগারের ভাঙ্গন ঘটায়। অ্যামাইলেজ স্টার্চ ও গ্লাইকোজেন ভাঙ্গে। পিত্তরস স্নেহ পরিপাকে সাহায্য করে। স্নেহের ভাঙ্গন ঘটায়। নিউক্লিয়েজ নিউক্লিক এসিডের পরিপাক ঘটায়।
অ্যাপেন্ডিক্স : ইউনিয়নতন্ত্রের কোষ বহন করে।
অগ্নাশয় : রক্তে গ্লুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে। কাইমকে প্রশমিত করে। টিপসিন ও কাইমোট্রিপসিন প্রোটিন কে ভাঙে। কর্বক্সিপেপটাইডেজ পরিপাক করে। অ্যামাইলেজ স্টার্চ ও গ্লাইকোজেনকে পরিপাক করে। লাইপেজ লিপিড পরিপাক করে। নিউক্লিয়েজ নিউক্লিক এসিডের পরিপাক ঘটায়।
বৃহদন্ত্র : পানি আয়ন ও ভিটামিন শোষণ করে। বর্জবস্তু জমা রাখে।
মলাশয় : বর্জ্য বস্তু বা মলত্যাগের অপেক্ষায় থাকে।
পায়ু : মালত্যাগে অংশ নেয়।
আমাদের শেষ কথা
আজকের পোস্টটি থেকে আমরা সবাই জানতে পারলাম যে পরিপাকতন্ত্র কাকে বলে এবং পরিপাকতন্ত্রের কার্যকলাপ কিভাবে সংঘটিত হয়। আপনার কাছে যদি পোস্টটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় তাহলে এই পোষ্টের লিংকটি কপি করে আপনার ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্ট করে দেওয়ার অনুরোধ রইলো, আজ এই পর্যন্তই।